Tarak Gorai Monogram logo-with-name-transparent-small

মনে পড়ে প্রাইমারি স্কুলের কথা

St-2BViencient-2BSchool.jpg
01

ছেলেকে স্কুলে দিতে গিয়েছিলাম :

রোজকার মতো আজও সক্কাল সক্কাল Buckinghamshire-er AONB ( অতি সৌন্দর্যময়) ‘CHILTERN হিলস’ এর ছোট ছোট টিলা সমৃদ্ধ আঁকাবাঁকা পথের মধ্যে দিয়ে ছেলেকে স্কুলে দিতে এসেছি।

জকের ওয়েদারটা বেশ সুন্দর। স্বচ্ছ নীল আকাশ। চারিদিকে কারপেটের মতো সবুজ ঘাসে ঢাকা ঢেউ খেলান মাঠ। এদিক ওদিক কিছু ঝোপ ঝাড়। কয়েকটা গরু বাছুর চরে বেড়াচ্ছে নিজের খেয়ালে। টিলাগুলির গায়ে কিছু ছোটো ছোটো ঘরও রয়েছে। আর তার পাশে আছে একটা ছোট্ট পানা পুকুর। ঠিক যেন আঁকা ছবির মতো। বাড়ি থেকে ২০-২৫ মিনিট দূরত্বের এই সময়টুকু আমার ব্যস্ততম জীবনের স্বল্প অবসর বলা যেতে পারে। তাই হাতে যেদিন একটু সময় থাকে সেদিন,গাড়িটাকে পার্ক করে মোবাইল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি আশেপাশের ‘মাদার নেচারের’ কিছু সুন্দর মুহূর্ত লেন্স বন্দি করার আশায়।

লাগান ফুলের সারি দেখে কেমন যেন নস্টালজিক হয়ে পড়লাম। কেন যেন বারবার বাড়ির কথা,ছোটবেলার কথা খুব মনে পড়ছে। মনে পড়ছে, আমার জন্মস্থান আর সরকারি চাকরিজীবী বাবার কর্মস্থান আসানসোলের কথা। বাবার হাত ধরে ছোট্ট ছোট্ট পায়ে আমার প্রথম স্কুল এর কথা।

আমার বাবা শ্রী দীপক কুমার গড়াই- খুবই মননশীল এবং রুচিসম্পন্ন মানুষ। ছোটবেলায় তার অনেক সিদ্ধান্তকেই মন থেকে মেনে নিতে পারতাম না অনেক সময়; যদিও তার বিরুদ্ধে কথা বলিনি কখনই। কিন্তু আজ যখন নিজের ছেলের ব্যাপারে কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে যায়, আশ্চর্যজনকভাবে যেন তাকেই অনুসরণ করি।

02

স্কুলের প্রথম অধ্যায়

সালটা ১৯৮৪-৮৫ হবে।আমার বয়স ছয় কি সাত।বাঙলায় তখন কমিউনিস্ট রাজত্বের রমরমা। চারিদিকে বাঙলা ভাষাকে সরকারি করা নিয়ে তোলপাড়।

প্রাথমিক-স্কুল গুলো থেকে ইংরাজি ভাষা সাহিত্য তুলে দেবার প্রবল আন্দোলন চলছে।আমার বাবা চিরকাল বাঙলা সাহিত্যের একনিষ্ঠ ভক্ত। এদিকে আমাকেও স্কুলে দেবার সময় উপস্থিত। বাবা তাঁর বন্ধু বান্ধব,পাড়া প্রতিবেশী সকলের সাথে কথা বলে মোটামুটি কোন স্কুলে আমায় দেওয়া যেতে পারে তার চিন্তা ভাবনা করছেন। অনেকে অনেক রকম মতামত দিচ্ছেন। সে সময় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলিতে পড়া একটা ব্যয় বহুল ব্যাপার ছিল। তাই ভাল স্কুলের সাথে সাথে বাজেটটাও মাথায় রাখতে হত। সব দিক ভেবে বাবার শুভাকাঙ্ক্ষীরা আমাকে সরকারি বাংলা মিডিয়াম স্কুলে দেবার পরামর্শ দিলেন।

কিন্তু এসবের ঊর্ধ্বে গিয়ে বাবা যখন আমায় খ্রিস্টান ক্যাথলিক স্কুল- ‘St.Vincent’s High and Technical School’ এভর্তি করলেন সবাই একটু অবাকই হয়েছিল। কারণ আমাকে এখানে পড়াতে গেলে বাবা-মা ‘কেও যথেষ্ট ‘এডজাস্টমেনট–স্যাক্রিফাইস-কম্প্রোমাইস’ করতে হত। বলায় বাহুল্য,আমার সুন্দর ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাঁরা সেই চ্যালেঞ্জকে হাসি মুখে মেনে নিয়েছিলেন। বাবার সেদিন হয়ত মনে হয়েছিল, মাতৃভাষার পৃষ্ঠপোষকতার সাথে সাথে ভবিষ্যতের জন্যে আমার ইংরাজি ভাষাটিও ভালোভাবে রপ্ত করা প্রয়োজন। তাই, পাড়ার বন্ধুরা বাঙলা মিডিয়ামে গেলেও ,আমি গেলাম ইংলিশ মিডিয়াম। একটু রাগ তো হচ্ছিল। কিন্তু বাবার হাত ধরে যখন স্কুলে পৌঁছলাম কি যে ভালো লেগেছিল।

03

স্কুলের অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য:

বিশাল গেটের ভেতর ঢুকে দেখলাম চারিদিকে লম্বা লম্বা কৃষ্ণ চূড়ার সারি দিয়ে ঘেরা; মাঝে মাঝে ছোটো ছোটো ফুলের বাগান,এক পাশে আম, জাম , কাঁঠাল ইত্যাদির গাছ।

সা

মনে অনেক বড় খেলার মাঠ,সেখানে বাস্কেট বল-ফুটবল-ক্রিকেট আরও কত কি খেলার ব্যবস্থা। একপাশে বাচ্চাদের খেলারও মস্ত পার্ক। বিল্ডিঙের ভেতরে সুন্দর সাজানো প্রিন্সিপালের অফিস আর আমাদের পড়াশুনার জন্যে উঁচু উঁচু ছাদের বড় বড় ক্লাস রুম।

ধীরে ধীরে ভালোবেসে ফেললাম আমার স্কুল ,শিক্ষক এবং নতুন সহপাঠী দের। ইংরাজি ভাষা সাহিত্যের পাশাপাশি শিক্ষকদের প্রোৎসাহে আস্তে আস্তে খেলাধুলা-নাচ-গান-আঁকা-কবিতাও শিখছিলাম মনের আনন্দে। মনে আছে, ক্লাস ওয়ানে প্রথম ‘স্কুলের বিশাল রঙ্গমঞ্চে’ দাঁড়িয়ে আমি একটি কবিতা বলেছিলাম এবং খুব প্রশংসা পেয়েছিলাম সবার কাছে।

 

04
I still remember vivid details of the school…
না

নান বাদ্যযন্ত্রে সাজান ‘মিউজিক রুম’এর প্রতি এক অদ্ভুত আকর্ষণ ছিল আমার। গিটার শোনার প্রতি ভালবাসাটা বোধই তখনি জন্মেছিল। খুব ভাল লাগত ‘কম্পুটার ল্যাব’। সে সময় আমার কাছে এটা ছিল বিস্ময়।

খুব মজা পেতাম যেদিন স্কুলের ভিতরে সুইমিং পুলে আমাদের ‘পুল পার্টি’ হত। আর সব চেয়ে ভাল লাগত ২৫ ডিসেম্বর-বড়দিনে। কি অপূর্ব সাজে সেজে উঠত স্কুল , স্কুলের ভিতরে চার্চ আর স্কুলের হোস্টেল। কি সুন্দর প্রেয়ার হত,বাইবেল এর ছোটো ছোট্ট ব্যাখ্যা শোনাতেন ফাদার আর সাথে কেক -চকলেট -বই উপহার দেওয়া হতো আমাদের সকলকে। সব মিলিয়ে যেন একটা আলাদায় মাধুর্য ছিল।

(আজো  আমার ভেবে ভাল লাগে যে, এত ব্যস্ততার মধ্যে আজও আমরা কয়েকজন স্কুলের বন্ধু ‘হোয়াট-শাপে’ একে অন্যের সাথে যুক্ত আছি)।

মনে আছে ক্লাস টু থেকেই বাবা আমাকে এক্সট্রা করে টিউশনি দিয়েছিলেন।স্কুলের সিলেবাস ছাড়াও অন্যান্য বই এর অঙ্ক ইংরাজি বিজ্ঞান ইতিহাস এসব চর্চা করতাম।এগুলো আলাদা করে শেখার কি প্রয়োজন বুঝতাম না।কিন্তু আমার ভাল লাগত নতুন নতুন জিনিস জানতে, পড়তে।বাবা একদিন ডেকে বললেন ‘মন দিয়ে পড়াশোনা কর।পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশনের এন্ট্রান্স এক্সাম তোমায় দিতে হবে। মস্ত বড় স্কুল, খুব ভাল পড়াশোনা’।আমি ভাবলাম- ‘আমারSt.Vincent’s High and Technical Schoolকি দোষ করল?কিন্তু চুপ থাকলাম’।বেশ কঠিন পরীক্ষা হল। আমি চান্স পেলাম।সব্বাই খুশী, আমি বাদে। তখন এটাও জানতাম না যে এটি আবাসিক স্কুল। সকলকেই হস্টেলে থেকে পড়তে হয়।আসলে বাবার মনে হয়েছিল, গুরুকুল এর আদর্শে গড়া এই বিদ্যা মন্দিরটি আমার বলিষ্ঠ চরিত্র গঠনের সহায়ক হবে,তাই এই ব্যবস্থা ।আর আমার সহজ সরল সদা-হাস্যময়ী মা ( শ্রীমতী গীতা রানী দেবী) ও আমার ভবিষ্যতের কথা ভেবে বাবার সাথে একমত ছিলেন।
05

আমার জায়গা, খেলনা ছেড়ে যাই ভাইয়ের তরে

যাইহোক, হোস্টেল যাবার দিন উপস্থিত।জীবনে প্রথমবার,মাত্র দশ বছর বয়সে, নিজের বাড়ি, স্কুল ,পাড়ার বন্ধু, বাবা মা এবং ছোট্ট মাত্র পাঁচ দিনের ভাই (ইন্দ্রনীল) কে ছেড়ে যেতে যে আমার কি ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল কি বলব সেদিন।

কা

উকে কিছু বলার অবকাশ ছিলনা।শুধু মনে মনে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম এবং কান্নাকাটি করেছিলাম। পরে অবশ্য জানতে পেরেছিলাম বাবা মা ও প্রথমবার আমাকে ছেড়ে খুব কষ্ট পেয়ে ছিলেন।

তবে, আজ এই একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে মনে হয়, ভাগ্যিস সেদিন আমার গুরুজনেরা আমাকে সঠিক Friend-Philosopher and Guide এর হাতে তুলে দিয়েছিলেন, নিজেদের স্নেহ মায়া মমতা কে বলিদান দিয়ে; তাই হয়ত ভাগীরথীর তীরে কলকাতা , গঙ্গার তীরে বেনারস কিম্বা টেমসের তীরে লন্ডনে সবার সাথে মানিয়ে গুছিয়ে চলতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয়না।বরং নিত্যনতুন দেশ-সভ্যতা-সংস্কৃতি কে জানতে বুঝতে আরও আনন্দ পাই।

Picture of Tarak Gorai
Tarak Gorai
London Based, Turnaround-N-Growth executive, run-n-manage portfolio companies of Private Equity and VC Funds. I speak at international events and Guest lectures in Management Colleges. My passion is Photography and Painting. With an evolving Philosophical bent of mind, I debate on Public-Policy-Politics. Friends call me Tee_En_Gee. Priorities are Family, Friends, and Profession. By night, I pen some of it down here.
Picture of Tarak Gorai
Tarak Gorai
London Based, Turnaround-N-Growth executive, run-n-manage portfolio companies of Private Equity and VC Funds. I speak at international events and Guest lectures in Management Colleges. My passion is Photography and Painting. With an evolving Philosophical bent of mind, I debate on Public-Policy-Politics. Friends call me Tee_En_Gee. Priorities are Family, Friends, and Profession. By night, I pen some of it down here.

Comments

Subscribe
Notify of
guest
6 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Table of Contents

Related posts