Tarak Gorai Monogram logo-with-name-transparent-small

My School Architecture Inspires

Followed from Part 1 :

ভগিনী নিবেদিতা যেমন জাতি ধর্মের  ঊর্ধ্বে উঠে মানব সেবায় ব্রতী হয়েছিলেন ;তেমন এক নিঃস্বার্থ ভাবনায়,শুদ্ধ শুচি মন নিয়ে যেন সব ছাত্ররা বিভিন্ন কলা -সংস্কৃতির উপাসনায় নিজেকে উৎসর্গ করতে পারে তার জন্যে তৈরি হয়েছিল নিবেদিতা কলা মন্দির এখানে গানের সাথে সাথে,তবলা,সেতার,তানপুরা,হারমোনিয়াম ইত্যাদি বিভিন্ন বাদ্য যন্ত্র, আঁকা ,এমনকি স্কাল্পচার ও ছাত্রদের শেখানোর ব্যবস্থা রয়েছে।

পাক্ষিক বা মাসিক বা বার্ষিক  পত্রিকা বের করার জন্যে ছিল স্কুলের নিজস্ব মুদ্রণ যন্ত্র।সেখানেও আমরা সকলে নিজেদের লেখা,কবিতা,গল্প, রচনা অথবা শিক্ষামূলক প্রবন্ধ দিতাম এবং ছবি আঁকতাম। বেশ মনে আছে আমার আঁকা দেখে, ১৯৯০ এ বার্ষিক পত্রিকার প্রচ্ছদ পটে ছবি আঁকার দায়িত্ব আমায় দেওয়া হয়েছিল।নিজের সৃষ্টিকে এইরূপ বইয়ের আকারে দেখে আরো নতুন কিছু লেখার বা আঁকার ঝোঁক  বেড়ে যেত যেন আপনা থেকেই।আর যেকোনো বিষয়ের তথ্য জানার জন্যে মহারাজদের সাহচর্য ছাড়াও ছিল 50000 বা ততোধিক বইয়ের একটি লাইব্রেরি । আর উল্লেখযোগ্য বিষয় হল জয়রামবাটি- কামারপুকুরে অবস্থিত শ্রীরামকৃষ্ণ-দেব এবং সারদা মায়ের বাড়ির আদলে তৈরি হয়েছিল  এই বিশাল লাইব্রেরি ।

বিদ্যানিকেতনের সুপরিকল্পিত এবং সুসজ্জিত মিউজিয়াম টি , অন্যান্য স্কুলের  পরি-কাঠামো থেকে আমাদের স্কুলটিকে  করে রেখেছে স্বতন্ত্র।সেখানে বিশেষত ভারতীয় সংস্কৃতি কলা সাহিত্য সৃষ্টির উৎপত্তি থেকে শুরু করে বিশ্ব সংসারের নানান খুঁটিনাটি তথ্য; নানান মিথলজি  সম্বন্ধে জানার সুন্দর অবকাশ রয়েছে।তাই সিলেবাস বহির্ভূত অনেক কিছু অজানা তথ্য আমরা জানতে পারতাম খুব সহজেই ।    

2.“When a building is inspired by deep thoughts it becomes architecture.”

3. ধ্যান গৃহ

আবাসিক হবার দরুন বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে একদিকে ছাত্রদের হোস্টেল আর অন্যদিকে মহারাজদের থাকার ব্যবস্থা করা ছিল। তার ফলে 24 ঘণ্টায় যে কোন বিষয়ে জ্ঞানলাভ করতে গেলে পেয়ে যেতাম তাদের সাহচর্য। আর জ্ঞানের সঠিক বিকাশের জন্যে প্রয়োজন উর্বর শান্ত মস্তিষ্ক আর তাই দরকার  মেডিটেশন।আমাদের রোজনামচায় তাই ধ্যান এবং প্রার্থনা একটি বিশেষ গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় ছিল।

 

পঞ্চবটীর মাঝখানে এক সুবিশাল হলঘর জুড়ে আমাদের ধ্যান ও প্রার্থনা মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে ।সামনে বিশাল  শ্রীরামকৃষ্ণ-দেবের মর্মর মূর্তি ।মেঝেতে লাল কারপেট পাতা।প্রায় ৫০০ ছাত্র এবং স্কুলের সমস্ত সদস্যরা স মিলে ‘পিন ড্রপ সাইলেন্স’ এ বসে ধ্যান করতাম আমরা।

সারাদিন পড়াশুনার শেষে, বিকেলে ৪ টের পর নানান খেলাধুলায় আমরা মাতিয়ে রাখতাম  স্কুল চত্বর ।কিন্তু ঠিক সন্ধ্যে নামার মুখে  খেলা শেষ করে সব্বাই স্নান করে পরিষ্কার ধূতি পাঞ্জাবী পরে প্রধান মন্দিরে এসে জড়ো হতাম।  মহারাজ বলতেন-‘ দুই চোখের মাঝে যেখানে শিব ঠাকুরের  ত্রিনয়ন আছে, ঠিক সেইখানে প্রজ্বলিত দীপ শিখা কল্পনা কর’। মজার ব্যাপার হল,একবার খেলাধুলার পর  স্নান সেরে ,ঠাণ্ডা হাওয়ায় ধ্যান গৃহে বসে সেই শিখার খোঁজ করতে গিয়ে আমি প্রায় ঘুমিয়েই পড়েছিলাম।বন্ধুর ঠেলা খেয়ে ধড়মড় করে উঠে দেখি সবাই উঠে পড়েছে ধ্যান সেরে।

 

এখন সেভাবে ধ্যান করা হয়ে ওঠেনা ঠিকই কিন্তু আজও একটু সময় বার করে নিজের মধ্যে কিছুক্ষণ একাত্ম হতে চেষ্টা করি।

3.আর্কিটেকচার

স্কুল জীবনের নানান  কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি আমাকে যেটা সবচেয়ে বেশি  আকৃষ্ট করত সেটা হল স্কুলের ভাস্কর্য।

 

 When a building is inspired by deep thoughts it becomes architecture  আজ এই কথার মর্মার্থ যথেষ্ট বুঝি। ক্রিয়েটিভিটি  আর ভাস্কর্যের মেলবন্ধনের একটি জল জ্যান্ত উদাহরণ আমাদের বিদ্যানিকেতনটি।আর প্রত্যেকটি ভাস্কর্যই এক একটি বিশেষ বার্তা বহন করে।আজ যখন আমি অক্সফোর্ডের বিশ্ব বিদ্যালয়ে ডুয়েল এম বি এ পড়তে যায় তখন সেখানের ভাস্কর্য গুলিও আমাকে বেশ টানে,আমার রামকৃষ্ণ মিশনের দিন গুলির মতো।

 

2. প্রবেশ দ্বার

কাজের সাযুজ্য  রেখে আমাদের স্কুলের প্রতিটি বিল্ডিং এর নামকরণ গুলি ছিল ভারী সুন্দর এবং আকর্ষণীয়।

প্রকৃতি দেবী হলেন জ্ঞান আহরণের  এক অন্যতম আধার। এই উপলব্ধি রামকৃষ্ণ মিশনে  গিয়েই আমার হয়েছিল। আমাদের স্কুলের মুখ্য দুয়ারে ঢুকলে দেখা যাবে সূর্যমুখী ফুল সহ 9 টি মঙ্গল ঘট। সূর্যের একনিষ্ঠ পূজারি সূর্যমুখীর মতো, ছাত্ররাও যেন নিষ্ঠা ভরে জ্ঞান আহরণ করে নিজেদের মন মস্তিষ্ক কে পরিপূর্ণ করার চেষ্টা করে তারই ইঙ্গিত। আমার এই নাতিদীর্ঘ জীবনে বৈচিত্র্য কিছু কম দেখলাম না।কিন্তু নিজের লক্ষ্য কর্মে স্থির থাকতে পারি হয়ত স্কুলে শেখা ওই আদর্শ গুলোর জন্যই- যেগুলো জোর করেই হোক বা ভালোবেসেই হোক শিক্ষাগুরুরা সযত্নে আমাদের মধ্যে লালিত করে দিয়েছিলেন সেই শৈশবেই।

সারদা মন্দির

আমাদের যেখানে মেইন ক্লাসরুম ছিল সেটিকে সারদা মন্দির বলা হত।  যেহেতু মা সারদা শিক্ষার অধিষ্ঠাত্রী দেবী, তাই শিক্ষার চর্চা বা দেবীর বন্দনার আলয়ই হল সারদা মন্দির আর আমরা হলাম তার একনিষ্ঠ ভক্ত।

 

এখানে শিক্ষার পাশাপাশি ছাত্রদের মধ্যে দেশাত্মবোধ জাগিয়ে তোলার জন্য সরস্বতী মাতার মূর্তিতে ভারত মাতার ও প্রচ্ছন্ন অবয়ব মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল- যেটি আজও স্ব-মহিমায় বিদ্যমান। এখানেও রয়েছে ইঙ্গিত-পূর্ণ বার্তা; যেমন- ফুটন্ত কমল-Respect, Reverence and Modesty র কথা বলছে। তেমনই  সরস্বতীর বাহন হংসরাজ ইঙ্গিতে বলে দিচ্ছেন কিভাবে জল মেশানো দুধ থেকে খাঁটি  দুধকে আলাদা করে নিতে হবে।হয়তো খুব ছোট্ট মেসেজ কিন্তু তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী,অন্তত আমাদের জীবনে।আজ এইরূপ বিদ্যা শিক্ষার জন্যই হয়তো নানান বিভ্রান্তির মধ্যে সঠিক জিনিসটা আলাদা করে নিতে  অসুবিধা হয় না আমার।

আমাদের এসেম্বলি হলের সামনে একটি ব্রোঞ্জের তৈরি অখণ্ড ভারতের মানচিত্র আছে।যার অর্থ- বৈচিত্র্য যতই থাক না কেন, আমরা  সব-মানুষই একই অখণ্ড দেশের নাগরিক। তাই কাজের সূত্রে বাস যেখানেই হোক না কেন  সেটাই দেশ এবং সেটাকে সুন্দর করে রাখার দায়িত্ব যেন অলিখিত ভাবেই আমাদের ওপর বর্তায়।বলতে দ্বিধা নেই তাই ভারত বা ভারতের বাইরে আমি সব দেশেই সমান স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।  

 

সারদা মন্দির থেকে আরেকটু এগিয়ে গেলে আছে   দীপলক্ষীর প্রতিমূর্তি। দীপ অর্থাৎ  আলো যা অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করে আর মা লক্ষ্মী ধনৈশ্বর্যের ভাণ্ডার। অর্থাৎ সঠিক শিক্ষার মধ্য দিয়ে নিজের অজ্ঞতাকে দূর করে নিজের জ্ঞানের ভাণ্ডারকে   আরও পরিপূর্ণ করে তুলতে হবে।হয়ত সেই কারণে আজও নতুন কিছু জানার বা শেখাতে আমার নেই কোনও অনীহা।

3.সেন্ট্রাল অফিস

আমাদের স্কুলের প্রধান কার্যালয়-দেবায়ন।একটি রথের আকারে তৈরি এই সেন্ট্রাল অফিস । এখান থেকেই বিদ্যাপীঠের সমস্ত গুরত্ব পূর্ণ কাজ গুলি সমাধা করা হয়।

শ্মশানের বুকে আমরা রোপণ করেছি পঞ্চবটী

সমস্ত রামকৃষ্ণ মিশনের “Mission and Vision” স্বল্প পরিসরে তুলে ধরা সহজ কাজ নয় । তবুও বলব-“শ্মশানের বুকে আমরা রোপণ করেছি পঞ্চবটী/ তারই ছায়ায় আমরা মিলাবো জগতের শতকোটি”। -এই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আমি যেমন জীবন যুদ্ধে এগিয়ে চলেছি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে,তেমনি পরবর্তী প্রজন্মের  মধ্যেও যদি এই মতাদর্শ কিছুটা ছড়িয়ে দিতে পারি তবেই যেন হবে জীবনের সার্থকতা।

Picture of Tarak Gorai
Tarak Gorai
London Based, Turnaround-N-Growth executive, run-n-manage portfolio companies of Private Equity and VC Funds. I speak at international events and Guest lectures in Management Colleges. My passion is Photography and Painting. With an evolving Philosophical bent of mind, I debate on Public-Policy-Politics. Friends call me Tee_En_Gee. Priorities are Family, Friends, and Profession. By night, I pen some of it down here.
Picture of Tarak Gorai
Tarak Gorai
London Based, Turnaround-N-Growth executive, run-n-manage portfolio companies of Private Equity and VC Funds. I speak at international events and Guest lectures in Management Colleges. My passion is Photography and Painting. With an evolving Philosophical bent of mind, I debate on Public-Policy-Politics. Friends call me Tee_En_Gee. Priorities are Family, Friends, and Profession. By night, I pen some of it down here.

Comments

Subscribe
Notify of
guest
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments

Table of Contents

Related posts