বাবার ডাক নাম বেনারসি

আজ চল্লিশের কোঠায় এসে সংসার-অফিস সামলে আরও নতুন কিছু জানার আর শেখার নেশায় আবার নতুন করে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ডুয়াল এম বি এর ছাত্র হলাম। একটু চেলেঞ্জিং হলেও বেশ লাগছে।আবার মনে পড়ে যাচ্ছে, কলকাতা থেকে বেনারস যাত্রা এবং সেখানে কাটানো জীবনের অন্যতম দুটি বছরের কথা।আজ সে কথায় বলব।

মার ঠাকুরদা আইসিএস ক্যাডার এর কর্মী ছিলেন। তাই  ইস্টার্ন রেলওয়ের কর্মসূত্রে নানান জায়গায় যাতায়াত লেগেই থাকত ।তখন দাদুর পোস্টিং – (হেড কোয়াটার) মোগল সরাই এ।কিন্তু তিনি থাকতেন বেনারসে। আর এখানেই আমার বাবার জন্ম ।তাই দাদু বাবাকে অনেক সময় আদর করে ডাকতেন ‘বেনারসি’।যদিও পরবর্তী কলে খুব বেশিদিন বাবার বেনারসে কাটান হয় নি; তবুও  জন্মস্থান  নিয়ে বাবা একটু স্পর্শকাতর ছিলেন বরাবরই ।তাই প্রথমে, এমবিএ পড়ে ছেলের বেসরকারি চাকরি করার পক্ষপাতী না  থাকলেও, পরবর্তীকালে যখন শুনলেন ‘বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি’ তে পড়ার সুযোগ পেয়েছি, তখন মনে মনে খুশিই হয়েছিলেন ।

বাবার সাথে বারানসি:
‘বেনারস’ নামের সাথেই মিশে আছে যেন অদ্ভুত এক নস্টালজিয়া । ফিজিক্স নিয়ে জেভিয়ার্স কলেজ থেকে বি এস সি করার পর ক্যাট দিয়ে যখন আমি বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি তে এমবিএ করার সুযোগ পায় তখন প্রথম বেনারসের সাথে আমার পরিচিতি । তারপর জীবন বয়ে গেছে তার নিজের গতিতে ।

বশেষে ২০০০ সালে সেন্ট জেভিয়ার্স কে বিদায় জানিয়ে কলকাতা থেকে বেনারসের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিলাম । প্রথমেই হোস্টেল পাওয়া যায়নি তাই শুরুর কিছু দিন বাবা এক মঠে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন। বেশ সুন্দর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন  মঠ।সেখানের মহারাজের সাথে বেশ সখ্যতা হয়ে গিয়েছিল ক’দিনে । তার কাছ থেকেই জানতে পারলাম ‘স্বয়ং ব্রহ্মা নাকি বহুকাল সেখানে তপস্যা করে গিয়েছেন। তার একপল সমান ‘মিলিয়ন ইয়ার’ ।আমি অবশ্য যুক্তি তর্কে না গিয়ে গল্পটাকেই বেশী উপভোগ করছিলাম।তাই তার সাথে কাশি বা বেনারস  এর সঠিক বয়স কত তা আর নির্ধারণে আর যায়নি ।

 

 

যাইহোক পরেরদিন দারুণ স্ফূর্তি নিয়ে গঙ্গা স্নানে গেলাম । নিজের মনের মত বিষয় আর পীঠস্থান দুটোই আমাকে খুব আপ্লুত করছিল । কিন্তু শহরের চারিদিকের ঘিঞ্জি- যানজট, কোলাহল, রাস্তায় যত্র তত্র পানের পিক, পথের মধ্যে ষাঁড়ের সারি এসব দেখে খানিকটা আশ্চর্য হয়েছিলাম। পুরুলিয়া -রামকৃষ্ণ মিশন কিংবা কলকাতা -সেন্ট জেভিয়ার্স -তার সাথে বেনারসের এইরূপ, বেশ অনেক খানি আলাদা; তবুও তার মাঝে কোথাও যেন এক মাধুর্য আছে ।কিন্তু তা স্বত্বেও গঙ্গার জলে  স্নান করতে নামার সময় আমি  কিন্তু কিন্তু করছিলাম । যাই হোক স্নান করে  গায়ে-মাথায় লতা-পাতা নিয়ে উঠে এলাম । গঙ্গা স্নানে পাপ-স্খলন হয় শুনেছি ; আমি জীবনে আদৌ কোনও পাপ করেছি কিনা মনে নেই,তবে অজ্ঞানত যদি করেও থাকি ,ভাবলাম এই বেলা-স্খলন হয়ে গেল। যায় হোক মঠে এসে পুনরায় স্নান করতে হয়েছিল আমাকে ।এখন অবশ্য শুনেছি নাকি,পুণ্যতোয়া গঙ্গা নাকি অনেক পরিষ্কার। ‘থ্যাংকস টু সাক্সেসিভ গভমেন্ট এফরট’ এবং যারা এর সাথে জড়িত আছেন তাদের’ । যাইহোক পরের দিন সকাল-সকাল স্নান সেরে বাবার সাথে পাড়ি দিলাম ইউনিভার্সিটির উদ্দেশ্যে।

প্রথম দেখা- ‘বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি’
সমস্ত শহরের শেষ প্রান্তে নদীর ধারে কাশি নরেশের দেওয়া তেরোশো একরের জমিতে বেনারস-হিন্দু ইউনিভার্সিটি স্থাপিত।

মস্ত শহরের শেষ প্রান্তে নদীর ধারে  কাশি নরেশের দেওয়া   তেরোশো  একরের জমিতে বেনারস-হিন্দু ইউনিভার্সিটি  স্থাপিত।এর বিশাল প্রবেশ পথে এসে সিকিউরিটি গার্ডের কাছে নাম লিখিয়ে একটা মানচিত্র হাতে পেলাম । যদিও এ ব্যাপারে কিছুটা জেনেই এসেছিলাম তবুও এবার চাক্ষুষ দেখব। সুবিশাল প্রবেশ দ্বারটি হল ‘লঙ্কা’ ।আর একে ঘিরেই একটা ছোটো শহর যেন গড়ে উঠেছে ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছাত্রিদের জন্যে।তাদেরই সুবিধার্থে বই খাতার  দোকান,জেরক্স বা ইন্টারনেট কাফে, রেস্তরা ইত্যাদি রয়েছে সেখানে।  আর এটাই হলো বহির্জগৎ এবং বিশ্ববিদ্যালয় অন্তর জগতের প্রধান সন্ধিস্থল ।মাঝে চওড়া রাস্তা, তার দুইপাশে ছবির মত সারি সারি গাছ ; আর   ইন্দো গথিক   ধাঁচে তৈরি এখানকার ইমারত গুলি-এক কথায় অপূর্ব ।

অর্ধচন্দ্রাকৃতি আকারে সাজান নগরের পরিকল্পনাটি ।  এর মধ্যস্থলে রয়েছে প্রায় তিন তলা সমান বিড়লা মন্দির। যাতে স্বয়ং বিশ্বনাথ বিরাজমান । মন্দিরটি পূর্বমুখী হওয়ায় সকালের সূর্যের প্রথম রশ্নি মন্দিরের চূড়ায় লাগে তারপর আরতি দিয়ে শুরু হয় দিনের কর্মসূচি । বলা হয় নাকি এটি ‘ওয়ার্ল্ডের টলেস্ট টেম্পেল টাওয়ার’ । এরপরে চারিধারে বলয় আকারে রয়েছে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ বিল্ডিং, একাডেমিক বিল্ডিং,সিভিল এবং গুরু পল্লি বা অধ্যাপকদের বাসস্থানের ব্যবস্থা । আমাদের সময় ছাত্র-ছাত্রী ছিল প্রায় 14 হাজার। দেখলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে সুন্দর সাজানো গোছানো ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট, মেডিকেল কলেজ, ইন্সটিটিউট অফ এগ্রিকালচা্র, কলা নিকেতন- সব যেন ছবির মতো সাজানো। ধীরে পৌঁছে গেলাম আমার গন্তব্যে। দেখলাম বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটির একটা বিশেষত্ব হল সব ডিপার্টমেন্টগুলোর হিন্দিতে খুব সুন্দর করে একটা নাম দেওয়া আছে ।জীবনে প্রথম জানলাম বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কে হিন্দিতে বলে   ‘প্রবন্ধ শাস্ত্র’ । শুরু হলো আমার স্নাতকোত্তর জীবনের পথ চলা যার; উদ্দেশ্য হলো- বৃদ্ধি আমরি তমসা নু ( নলেজ  ইমপাট ইম্মর্টালিটি)।কিছুদিনের মধ্যে হস্টেল পেলাম  ।

নতুন অধ্যায়:

এখানে যদিও কোএড সিস্টেম তবুও দেখতাম সেন্ট জেভিয়ার্সের মতো ইউনিভার্সিটিতে ছেলে মেয়েদের অবাধ মেলামেশার স্বাধীনতাকে, ঐতিহ্যবাহী অধ্যাপকেরা স্বচ্ছন্দ্ব ভাবে মেনে নিতে পারতেন না।

যে

হেতু আমি ফিজিক্স থেকে ম্যানেজমেন্টে এসেছি তাই একাউন্টান্সি, ফিনান্স,ইকনমিক্স- এই বিষয়গুলি আমার কাছে একটু হলেও নতুন । তাই এদেরকে আরো বেশি করে জানতে বুঝতে আমার বেশিরভাগ সময় কাটতো লাইব্রেরী এবং সেন্ট্রাল লাইব্রেরীতে । ধীরে ধীরে অধ্যাপক বন্ধুবান্ধবদের সাথে পরিচিতিও বাড়ছিল ।এখানে যদিও কোএড সিস্টেম তবুও দেখতাম সেন্ট জেভিয়ার্সের মতো ইউনিভার্সিটিতে ছেলে মেয়েদের অবাধ মেলামেশার স্বাধীনতাকে, ঐতিহ্যবাহী  অধ্যাপকেরা স্বচ্ছন্দ্ব ভাবে মেনে নিতে পারতেন না।আমার নিজের ডিপার্টমেন্ট ছাড়াও সিনিয়র বা অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের ছেলে মেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব হচ্ছিল।

নিজেকে বেশ মেলে ধরতে পারছিলাম যেন।আগের চেয়েও মানুষের সাথে মেশাটা যেন আরও সহজতর মনে হচ্ছিল ।ফিজিক্স এর ‘থিওরি ইকুয়েশন’ ছেড়ে ম্যানেজমেন্ট পড়ার সাথে সাথে বাস্তবেও যেন ‘হিউম্যান ম্যানেজমেন্ট’ শিখছি । বিভিন্ন মানুষের অনুভূতি আকাঙ্ক্ষা এসব বোঝার চেষ্টা করছি । আর এসব করতে করতে জড়িয়ে পড়ছি নানা ইভেন্টে ; ইয়ুথ ফেস্টিভাল, ফেস্ট, সিনিয়রদের ফেয়ারওয়েল ইত্যাদিতে।ওদিকে পড়াশোনায় ভালো রেজাল্ট হওয়াতে অধ্যাপকদেরও বেশ স্নেহের পাত্র হয়ে উঠেছিলাম ।ফলত মনে হচ্ছিল ‘ফিজিকস থেকে এমবিএ’ আসার সিদ্ধান্তটা সঠিকই নিয়েছিলাম  । আমার আনন্দ এবং উন্নতিতে আমার বাবা মা ও ভীষণ খুশি ছিলেন ।

নস্টালজিক বেনারস
সে সময় বেনারসে অবসর বিনোদনের খুব একটা সুযোগ সুবিধা ছিল না। কখনো কখনো এক দুটো সিনেমা দেখতে যেতাম বটে কিন্তু আমার যেন গঙ্গা তীরে বসে আরতি দেখতে বেশি ভালো লাগতো ।

ই শহরের অন্যতম একটি জায়গা হল আরশি ঘাট – আর তার সাথে জড়িয়ে আছে আমার অনেক মিষ্টি মধুর স্মৃতি ।কত সন্ধ্যে যে ‘তার’ হাতে হাত রেখে,ঘাটের সিঁড়িতে বসে গঙ্গার ঐ স্বচ্ছ জলে  রাঙ্গা সূর্যের প্রতিচ্ছবি দেখতে দেখতে কেটেছে;কতদিন যে সন্ধ্যারতির আচারে আমরা মুগ্ধ হয়ে শব্দ হারিয়েছি তা বলে বোঝানোর নয়  ।

এই শহরে গঙ্গা নদী দক্ষিণ থেকে উত্তরে প্রবাহিত । বর্ষার সময় এই নদী ভীষণ জলে ভরে উঠত, সে সময় নদীর ঘাটের কাছে বেশী যাওয়া যেত না। আবার শীতে জল কমে গিয়ে চড়া পড়ত অনেক খানি; তখন মাঝে মাঝেই আমরা নৌকা করে পৌঁছে যেতাম সেখানে। গোধূলির প্রান্তে কোণে দেখা আলোয়, ঠাণ্ডা উত্তুরে হাওয়ায়,দূরে মন্দির থেকে ভেসে আসা শঙ্খ- ঘণ্টা-মন্ত্রের ধ্বনি আর শয়ে শয়ে প্রজ্বলিত প্রদীপরাজি ; ঘাটের অন্যদিকে নানান সাধু সন্ত দের ভিড় আর তার মধ্যে নৌকা করে গঙ্গা বক্ষে ভেসে চলা- সে এক অনাবিল আনন্দ।মনে হতো স্বর্গ রাজ্যের কোনও এক প্রান্তে বুঝি পৌঁছে গেছি।

প্রেম এসেছিল নিঃশব্দে
বলতে বাধা নেই, লাইব্রেরীর সুন্দর সুন্দর বই সুন্দর পরিবেশ আর সহপাঠিনীদের জন্য পড়াশোনাতে একটু বেশিই মনোযোগী হয়ে পড়েছিলাম
ধী

রে ধীরে প্রথম বছর ভালোভাবেই পার করলাম । এসময়ের একটি ছোট্ট ঘটনা মনে পড়ে গেল।কোনও একটা কারণে সিনিয়র ছেলেদের সাথে জুনিয়র ব্যাচের  কোন সমস্যা হয়েছিল । সেখানে গিয়ে দেখি দুপক্ষই বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়েছে।কোনরকমে তাঁদের আশ্বস্ত করে,সবার কথা শুনে মাঝামাঝি একটা সিদ্ধান্ত এলাম যাতে কোনো পক্ষই অপমানিত বোধ না করে,ফলে দুপক্ষই খুশী হয়ে ব্যাপারটা মিটিয়ে নিয়েছিল সেখানেই।তারপর বন্ধুদের নিয়ে ফার্স্ট ইয়ারের জন্য আয়োজন করলাম ‘নবীন-বরণের’।এইসব নানান ঘটনায় আমার যেন মনে হচ্ছিল জুনিয়রদের মধ্যে বিশেষ করে মহিলা মহলে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছিলাম।

বলতে বাধা নেই, লাইব্রেরীর সুন্দর সুন্দর বই সুন্দর পরিবেশ আর  সহপাঠিনীদের জন্য পড়াশোনাতে একটু বেশিই মনোযোগী হয়ে পড়েছিলাম ; লাইব্রেরিতে বেশী যাবার দরুন লোকাল কিছু গুণ্ডা ভাই দের ধমকানিও খেয়েছিলাম  ফ্রিতে।জীবনের এই সন্ধিক্ষণেই আমার মনে লেগেছিল প্রেমের রং।আমার জুনিয়র ব্যাচের এক সুন্দরীর প্রেমে পড়লাম।খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম সেদিকে তিনিও আমায় মন প্রাণ সঁপে বসে আছেন। কিন্তু প্রকাশ করছেন না।অবশেষে অনেক আলাপ আলোচনার পর দু জনেই দুজনের কাছে অঙ্গিকার বদ্ধ হয়েছিলাম।

ছাত্র জীবনের শেষ প্রান্তে

ধী

দেখতে দেখতে কেটে গেল আরো কিছু মাস । ফাইনাল এক্সাম এগিয়ে আসছে । মনের মধ্যে আবার চিন্তা শুরু এরপর কি হবে ? কেমন চাকরি পাব? কোথায় যাব ইত্যাদি । কারণ আমিও ধীরে ধীরে বাবার মতো একটা পরিবারের মাথা হবার স্বপ্ন দেখছি । ভালো লাগা প্রেম উত্তেজনা চিন্তা সব মিলিয়ে এগিয়ে চলছিলাম ।

হঠাৎ 2000 সালে তখন চারিদিকে ‘ডট কম বাস্ট’ হল যার প্রভাব ২০০২ পর্যন্ত ছিল।এরই মধ্যে আবার ঘটে গেল ২০০১ এর ভয়ানক ‘নাইন ইলেভেনের’ দুর্ঘটনা।যার ব্যাপক ভাবে প্রভাব পড়ল সমস্ত বিশ্বের রাজনীতি সমাজনীতি এবং অর্থনীতিতে । ভারতবর্ষে রমরমিয়ে চলা প্রাইভেট ইন্ডাস্ট্রি গুলি হঠাৎ যেন থমকে দাঁড়িয়ে গেল।বেসরকারি সংস্থান গুলোর ওপর পড়ল কালের করাল ছায়া।চারিদিকে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে কলেজ ক্যাম্পাসে নাকি এইবার কোন ভালো কোম্পানি আসবে না । মনের মধ্যে শুরু হল চাপা সংশয় । কারণ ফিজিকস থেকে এমবিএ সিদ্ধান্তটা মোটেই সহজ ছিল না।নিজেকে প্রমাণের জন্যে প্রতি মুহূর্তে পাল্লা দিয়ে লড়ে যেতে হয়েছে ।

ভাবছি, ভগবান কি আবার নতুন কোনও পরীক্ষা নিয়ে আমায় যাচাই করতে চাইছেন?পরিস্থিতির এই চরম সীমায় দাঁড়িয়ে অনুভব করছিলাম যে আজ শুধু আমি নয় আমার সাথে আমার প্রেমিকা এবং বাবা মা এরও ভবিষ্যৎ জড়িয়ে আছে।তাই নিজের ওপর বিশ্বাস আর ভগবানের প্রতি আস্থা রেখে নিজের লক্ষ্যে স্থির ভাবে এগোতে থাকলাম ।

অবশেষে এলো ক্যাম্পাসিং এর দিন । ফাইনাল ইয়ারের ফাইনাল পরীক্ষার কিছুদিন আগে ।মনের মধ্যে যতোটা ঝড় বয়ে যাচ্ছিল, ক্যাম্পাসিঙের   সময় তার চেয়ে শত গুণ ধীর স্থির শান্ত ভাবে পার করছিলাম চাকরীর পরীক্ষার নানান ধাপ ।অবশেষে,সারাদিনের ইন্টার্ভিউ ও নানান গ্রুপ ডিসকাশনের পর বিকেলে জানতে পারলাম-  ‘ওখাড়ড বায়োটেকনোলজি  কোম্পানিটি’ আমাকে সিলেক্ট করেছে।

ফাইনালি হাতে পেলাম আমার বহু প্রতীক্ষিত কনফার্মেশন লেটার।বার বার করে বিজনেস এক্সিকিউটিভ পদে নিজের নাম, জয়েনিং এর তারিখ,আমার মাইনে – এই গুলি পড়ছিলাম।অতি কষ্টে চোখের জল আটকেছিলাম।বলা বাহুল্য জীবনের প্রথম সেই ‘চাকরীর চিঠি’ ল্যামিনেশন করে আজও আমার আর্কাইভ ফোল্ডারে রাখা আছে।

 

কোম্পানির পদস্থ অফিসার জানালেন-  ফাইনাল পরীক্ষার পর আমি ‘ম্যানেজমেন্ট ট্রেনি’ হিসেবে সোজা সেই কোম্পানিতে জয়েন করছি এবং সেই মতো কাগজপত্র সই সাবুদও হয়ে গেল।আমার আনন্দ আর দেখে কে?মনে মনে বাবা বিশ্বনাথকে শতকোটি প্রণাম জানালাম । বাবা মা’র মুখটা মনে পড়ল  ।

ক্যাম্পাসের বাইরে এসে সোজা ‘ত্রিবেণী’ (বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটির লেডি  হোস্টেল)তে ফোন করে জানালাম- ‘চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছ…এখন আর  কেউ আটকাতে পারবে না’ …।।

 

এরপর শুরু হল প্রথম চাকরী জীবন।মনে হচ্ছিল ব্রহ্মচর্য কাটিয়ে গার্হস্থ্য জীবনের পথে উত্তীর্ণ হলাম।

 

সেই কাহিনী না হয় অন্য আরেকদিন শোনাবো।